দক্ষিণ এশিয়ার তিন দেশ-পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও ভারতে গত সোমবার আঘাত হানা শক্তিশালী ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা তিন শ ছাড়িয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ৭ দশমিক ৫ তীব্রতার ওই ভূমিকম্পে অন্তত ৩১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছে দুই হাজারের বেশি মানুষ। ক্ষয়ক্ষতির পূর্ণাঙ্গ চিত্র অবশ্য এখনো স্পষ্ট নয়। জোরকদমে উদ্ধারকাজ চলছে। তবে রাস্তাঘাটের ব্যাপক ক্ষতি হওয়ায় দুর্গম ও প্রত্যন্ত এলাকায় যাওয়া দুষ্কর হয়ে পড়েছে।
পাকিস্তানি কর্মকর্তারা জানান, ভূমিকম্পে পাকিস্তানে কমপক্ষে ২৩৭ জন মারা গেছে। আহত হয়েছে দুই হাজারের বেশি। দেশটির জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের হিসাবে, কমবেশি আড়াই হাজার বাড়িঘর পুরোপুরি বা আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর মুখপাত্র লে. জেনারেল অসীম সালিম বাজওয়া জানান, দুর্গতদের মধ্যে ত্রাণ সরবরাহ করতে সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টার ও বিমান ব্যবহার করা হচ্ছে। ভেঙে পড়া টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা সচল করতে কাজ করছেন সেনারা।
আফগানিস্তানের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনামন্ত্রী গতকাল জানান, ভূমিকম্পে দেশটিতে ৭৪ জন নিহত ও ২৬৬ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। অবশ্য গণস্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইসমাইল কাউয়ুসি বলেন, আহতের সংখ্যা ৪৫৭ জনে দাঁড়িয়েছে।
টাইমস অব ইন্ডিয়া গতকাল জানায়, ভূমিকম্পে উত্তর ভারতে চারজনের প্রাণহানি ঘটেছে। এর মধ্যে তিনজনই মারা গেছে শ্রীনগরে। হিমাচল প্রদেশ, উত্তরাখণ্ড এবং জম্মু ও কাশ্মীরে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে।
হতাহতের সংখ্যা বাড়ার আশঙ্কা করছেন পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের কর্মকর্তারা। দেশ দুটির কর্মকর্তারা জানান, উদ্ধার তৎপরতার গতি বাড়ানো হয়েছে। পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী বলেছেন, সবচেয়ে অগ্রাধিকার পাবে জীবন বাঁচানোর কাজ। উদ্ধারকাজ চলবে দিন-রাতের ২৪ ঘণ্টাই। প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ গতকাল সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত প্রদেশ খাইবার পাখতুনখোয়ার শাংলা শহর পরিদর্শন করেন। এই প্রদেশেই মারা গেছে কমপক্ষে ৪৯ জন। ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সহায়তা পাকিস্তান ও আফগান সরকারকে এরই মধ্যে সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছে ভারত, ইরান ও যুক্তরাষ্ট্র।
যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল ছিল আফগানিস্তানের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় বাদাখশান প্রদেশের জুরম জেলা। এলাকাটি হিন্দুকুশ পাহাড়ি অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত। রাজধানী কাবুল থেকে এর অবস্থান ২৫০ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে। আফগানিস্তানের সবচেয়ে দরিদ্র প্রদেশ বাদাখশানের গভর্নর শাহ ওয়ালিউল্লাহ আদিব মৃতের সংখ্যা ১১ উল্লেখ করে জানান, প্রদেশের ১৩টি জেলার সবকটিই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কমবেশি দেড় হাজার বাড়িঘর আংশিক বা পুরোপুরি ধসে পড়েছে। এক মিনিট স্থায়িত্বের ওই ভূমিকম্পের সময় চারদিকে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। শক্তিশালী ভূমিকম্পটির কম্পন চীনসহ তাজিকিস্তান, কিরগিজস্তান ও উজবেকিস্তানেও অনুভূত হয়েছে।